বাংলা গানের সূর্য গাজী মাজহারুল আনোয়ার
বিনোদন ডেস্ক
‘যদি আমাকে জানতে সাধ হয়
বাংলার মুখ তুমি দেখে নিও
যদি আমাকে বুঝতে মন চায়
এ মাটির শ্যামলিমায় এসো প্রিয়
এখানে বৃষ্টি ঝরে রিমঝিম শ্রাবণের সেতারে
কুমারী নদীর বুক কেঁপে ওঠে প্রণয়ের জোয়ারে
যদি কখনও দেখতে সাধ হয়
আমার মনের চঞ্চলতা
তবে বরষার কোন নদী দেখে নিও’
এমন কালজয়ী গানের ¯্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। প্রায় ৩০ হাজার গান লিখেছেন তিনি। যা অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর ও অসাধারণ এক সাফল্য। মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ; অনুভূতির বৈচিত্রময় প্রকাশে গেল কয়েক দশক ধরেই এদেশের মানুষের কাছে খুব প্রিয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গান। অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি। আমাদের সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি। বিবিসি বাংলার তৈরি করা করা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান। এটাও এক বিরল সম্মান বটে।
গানের এই কবি মতে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, গানকে পরিবারের মধ্যে আনতে হবে। কারণ গান পরিবার থেকে বিচ্যুত হলে তার আয়ু খুব কম। বা এভাবেও বলা যায়, যে গান পরিবারের মধ্যে বেঁচে থাকে সেই গানই কালজয়ী হয়। এজন্যই নজরুল-রবীন্দ্রনাথের গান কালজয়ী। কারণ তাদের গান পরিবার থেকে সারাদেশে ছড়াতো। যেমন একটা সময় ছিলো যখন যে বাড়িতে গ্রামোফোন থাকতো সে বাড়ির বউয়েরা সপ্তাহে একদিন পাশের বাড়ির বউদের নিয়ে আয়োজন করে গান শুনতেন। নতুন রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুল সংগীত এসেছে বাজারে, আসুন একদিন শুনবেন বলে দাওয়াত দিতেন। বিশেষ রান্না বান্না চলতো। তো দুপুরে খাওয়ার পর সবাই গোল হয়ে বসতেন। বাড়ির গিন্নি গ্রামোফোনে একটা গান বাজিয়ে দিলেন। এখানে গ্রামোফোন থাকার একটা বড়াইও কিন্তু হতো। তো এভাবে যেটা হয়েছে অন্য বউরার তাদের বাড়িতে গিয়ে গ্রামোফোন কেনার বায়না ধরেছে, রবীন্দ্র-নজরুলের গানের ভক্ত হয়েছে। এক এক করে সব ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল এ দুই কবির গান। এটাই কিন্তু হয়েছে এবং হয়।
মানুষ এক জীবনে হাজার হাজার কোটি টাকা উপার্জন করে, গাড়ি করে, বাড়ি করে; একটা সময় সবই চলে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও শান শওকতের অধিকারী সম্রাটের ক্ষমতা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। মাটিতে মিশে গেছে মানুষের গড়া অনেক গর্বিত সভ্যতাও। তার ভিড়ে কিছু মানুষ এমন কিছু কাজ করে গেছেন যা শত সহস্র বছর পেরিয়েও এই পৃথিবীতে টিকে আছে নন্দিত হয়ে, অনুপ্রেরণায়।
গানের বাইরেও গাজী মাজহারুল আনোয়ার বিকশিত হয়েছেন একজন চলচ্চিত্র চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও। কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে এক জীবনে কোটি মানুষের ভালোবাসা ও দোয়াকেই সেরা বলে মনে করেন। পেয়েছেন বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশের একুশে পদকও লাভ করেন।