রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলার
মহাকাল প্রতিবেদক | প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৪৮ |
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ভেঙে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। গত পাঁচ মাসে সাত বার রেকর্ড করেছে রিজার্ভ। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
করোনার ধাক্কা সামলে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বজুড়ে করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বৈধ পথে বিপুল অংকের রেমিট্যান্স দেশে আসছে। চলতি মাসের ১০ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৮১ লাখ ৪০ কোটি ডলার মিলিয়ে চলতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন একটি বছরে এত বেশি রেমিটেন্স আসেনি কখনও। এদিকে রেমিট্যান্স বাড়লেও আমদানি দায় পরিশোধের তেমন চাপ নেই। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর ডলার কিনতে হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকেও ঋণ আসছে। যে কারণে রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ২০০ কোটি ডলার। গত পাঁচ মাসে সাত বার রেকর্ড করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর এই মজুত আরেকটি বিলিয়ন ডলারের ঘর টপকে ৪১.০৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। গত বছর এসময় মজুতের পরিমাণ ছিল ৩২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূলত করোনাভাইরাসের ধাক্কায় অর্থনীতিতে সৃষ্ট নেতিবাচক অবস্থার কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় মজুত দিন দিন বাড়ছে। গত অর্থ বছরে আমদানি ব্যয় ৮.৫৬ শতাংশ কমে ৫৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয়। করোনা মহামারির ধাক্কা না থাকলে এ বছর তা ৬০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি যেত। এরকম কম আমদানির প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১২ শতাংশ কমে আমদানি হয়েছে ১১.৭৪ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিক সময় থাকলে কমপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার এই তিনমাসে অতিরিক্ত আমদানি খাতে ব্যয় হতো। আমদানির পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কাজে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো, তা এইসময় হয়নি। এটিও মজুত বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। সে সময় আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত। আর রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না- এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেয়া হয় তখন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।