মৌলভীবাজারে কালের সাক্ষী নির্যাতন কক্ষ
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা| প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২৮ |
মৌলভীবাজার শহরে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল পাক বাহিনীর এই অঞ্চলের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার। যুদ্ধকালীন হানাদার বাহিনীর টর্চার শেল হিসেবে পরিচিত বাংকারটি পিটিআইতে মাটি চাপা অবস্থায় আজো সাক্ষী হয়ে আছে।
মৌলভীবাজার শহরের বনবীথি এলাকায় অবস্থিত পিটিআই। টর্চার সেল নির্মাণের জন্য এই স্থানটি বেছে নেয় পাকবাহিনী। মাটির নিচে দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাংকারটি নির্মাণ করা হয় নির্যাতন ও হত্যার উদ্দেশ্যে। ৩০ ফুট বাই ২৫ ফুটের বাংকারের গভীরতা ১০ ফুট। রুমগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা এবং সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের কাহিনি।
এই ভবনে থাকতেন বিগ্রেডিয়ার ইফতেখার রানা। ৯ মাসের রক্ত ঝরানো সময়কে ধারণ করা বাংকারটি নতুন প্রজন্মের চোখের আড়াল হয়ে আছে। অরক্ষিত অবস্থায় অযত্ন অবহেলায় তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে স্থানটি । বাংলাদেশের বিজয় ৪৯ বছর পেরিয়ে ৫০-এ পা রাখলো কিন্তু বাংকারটি পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মারক হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাত্তরে পিটিআই কেন্দ্র ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্রিগেড সদর দপ্তর। এখানে তারা মাটি খনন করে একটি পাকা বাংকার নির্মাণ করেছিল। হানাদার বাহিনী পিটিআই কেন্দ্র ও বাংকারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনদের ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করত। অনেককে হত্যা করে পাশের কুয়ায় ফেলে দিত। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় বাংকারটি ছিল নির্যাতনের কেন্দ্রস্থল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নির্যাতিত মানুষের চিৎকার ও আর্তনাদ ছিলো প্রতিদিনকার ঘটনা।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আজিজুর রহমানকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তখন তিনি মৌলভীবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে গঠিত মহকুমা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব আসম সালেহ সোহেল জানান- মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও বিভিন্ন স্থান, বধ্যভূমি এগুলো সংরক্ষণ জরুরি। পিটিআইয়ে অবস্থিত এ টর্চার সেলটি সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মকে এর সাথে পরিচয়ের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
বর্তমান অবস্থায় বাংকারের ছাদে ফুলের টব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফাঁকা অংশেও নানা জাতের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। সেখানে কোনো ফলক নেই। দেখে মনে হয় অনেক মজবুত, কিন্তু ধীরে ধীরে ভবনটি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক দীপংকর মোহান্ত জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এ অবস্থান নেয়। এখানে মাটি খনন করে মাটির নিচে একটি টর্চার সেল নির্মাণ করে। যুদ্ধ চলা অবস্থায় তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ- নির্যাতন করতো। বর্তমানে এই টর্চার সেল ভগ্নদশায় রয়েছে। বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে দেয়াল ও ছাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন দফতের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছি কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা দাবি জানাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক উদ্যোগী হয়ে ঐতিহাসিক এই স্থান সংরক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এই স্থানটি সংরক্ষণ করে বাংকারের উপরে একটি ভাস্কর্য এবং ভিতরে মুক্তিযুদ্ধ মিউজিয়ামের দাবি জানাই।
ডিসি মীর নাহিদ আহসান বলেন, এই স্থানটি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবো।